রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলাে সংক্ষেপে বর্ণনা কর



প্রশ্নঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের ৫টি পদ্ধতি বর্ণনা কর।
অথবা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলাে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ যেকোনাে বিষয় অধ্যয়ন করতে হলে তার বিজ্ঞানভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনা করার জন্যও কতিপয় সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। সেসব পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সঠিকভাবে অনুধাবন ও ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভবপর হয়। এ পদ্ধতিগুলাের প্রকারভেদে বিভিন্ন রূপ হতে পারে।
 
রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে অনুসৃত পদ্ধতিসমূহঃ কোন বিষয়ের বৈজ্ঞানিক আলােচনার জন্য সাধারণত যেমন একক সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অবলম্বন করা হয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তেমনি একক সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অবিলম্বন করা যায় না- কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান হিসেবে পুরোপুরি পুর্নাঙ্গ নয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি অসম্পূর্ণ বিজ্ঞান বলে এর সমস্যার প্রকারভেদের ভিন্নতা অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এর পঠন ও অনুসন্ধান করতে হয়। তন্মধ্যে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলােই সমধিক উল্লেখযােগ্যঃ

(১) পর্যবেক্ষণ ও মূল পদ্ধতিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলােচনার ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্র খুবই সীমিত, কাজেই কোনাে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিই গ্রহণীয়। বিভিন্ন দেশের শাসন পদ্ধতি, এর পরিচালনা পদ্ধতি, সরকারের অনুসৃত নীতির ফলাফল লক্ষ্য করে এরূপ সিদ্ধান্তে আসা যায়।


(২) তুলনামূলক পদ্ধতিঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রে এদের সংগঠন, নীতি ও কার্যাবলীর তুলনামূলক আলােচনা করে কোনটি উত্তম তা নির্ণয় করা যায়। যেমনঃ গণতন্ত্র ও একনায়কত্বের তুলনামূলক আলােচনা করে কোনটি উত্তম এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে এরিস্টটল ১৫৮ টি দেশের শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে তার আদর্শ রাষ্ট্রের চিত্র অংকন করেছিলেন।

(৩) ঐতিহাসিক পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতির সাহায্যে অতীতের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর সঙ্গে বর্তমান ঘটনাসমূহের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে প্রয়ােগের জন্য একটি সিদ্ধান্তে আসা যায়। ইতিহাসের সাহায্যে অতীতকে সম্যকরূপে উপলব্ধি করতে না পারলে বর্তমানের মূল্যায়ন করা যায়।

(৪) পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতিও অনুসরণ করে। বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের সরকার ও গবেষণা সংস্থা পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভােট দান পদ্ধতি, জনমতের প্রাধান্য, আর্থিক অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ের পর্যালােচনায় এ পদ্ধতি বিশেষভাবে কার্যকর।

 
(৫) সাক্ষাৎকার পদ্ধতিঃ বর্তমানকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এ পদ্ধতি অনুযায়ী গবেষণার যেকোনাে ক্ষেত্রে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত জনসাধারণের কাছ থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
 
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনা করার জন্য কোন পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রযােজ্য তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কারণ কোনাে একটি ঘটনার সাথে ওতপ্রােতভাবে অনেকগুলাে ঘটনা জড়িত থাকে, তাই বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে এদের বিশ্লেষণ করতে হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক