সংস্কৃতির উপাদানসমূহ আলােচনা কর


প্রশ্নঃ সংস্কৃতির উপাদানসমূহ আলােচনা কর।
অথবা, সংস্কৃতির উপাদানসমূহ বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ সংস্কৃতি সভ্যতার বাহন। সমাজ জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তুলে সংস্কৃতি মানবজীবনের ভিত্তি রচনা করে। আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সভ্যতার উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে সংস্কৃতি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত জীবনপ্রণালি সংস্কৃতির গতিকে সচল রেখেছে। সংস্কতির পথপরিক্রমার মধ্য দিয়ে সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছে।

সংস্কৃতির উপাদানঃ Culture বা সংস্কৃতি হলাে ব্যক্তি বা সমাজ জীবনের দর্পণ। জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন উপায়ে মানুষ স্বীয় সমাজের প্রচলিত আচার-আচরণগুলাে আয়ত্ত করে সামাজিক হওয়ার দীক্ষা পায়। অন্যান্য জীবের তুলনায় মানুষের এই স্বতন্ত্রতা ও ভিন্নতাই হলাে সংস্কৃতি। সংস্কতি একটি আপেক্ষিক শব্দ ও জটিল প্রপঞ্চ- যার চর্চা শুরু হয়েছে বহুকাল পূর্বে জার্মানীতে। এ কারণে Culture বা সংস্কৃতির পরিচয় ও উপাদান নিয়ে ব্যাপক মতান্তর সৃষ্টি হয়েছে।


সাহিত্যিকদের দৃষ্টিতে সংস্কৃতির উপাদানঃ Mathow Arnold এর ভাষায়, সাহিত্যে যা কিছু সুন্দর; যা কিছু ভালাে তার অনুশীলনই সংস্কৃতি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকরের ভাষায়, হীরক খণ্ডটি হলাে সভ্যতা আর এ থেকে বিচ্ছুরিত দ্যোতিটি হলাে সংস্কৃতি।

সমাজবিজ্ঞানী ও নৃ-বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে সংস্কৃতির উপাদানঃ সমাজবিজ্ঞানী ও নৃ-বিজ্ঞানীরা দু’টো অর্থে Culture-কে সংজ্ঞায়িত করেছেন। প্রথমত, ব্যাপক অর্থে Culture হলাে জীবনযাত্রার সামগ্রিক পদ্ধতি। দ্বিতীয়ত সংকীর্ণ অর্থে সংস্কৃতি হলাে মার্জিত রুচি ও অভ্যাসগত উৎকর্ষ।

পশ্চিমা সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে সংস্কৃতির উপাদানঃ পশ্চিমা সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে সংস্কৃতি হলাে way of life. তবে নৃ-বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সংস্কৃতির ভিন্ন পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন: নৃ-বিজ্ঞানী Edward. B. Tylor ১৮৭১ সালে তার Primitive culture গ্রন্থে সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের আচার-অনুষ্ঠান, বিশ্বাস, শিল্প ইত্যাদির মিশ্র রূপকে সংস্কৃতি বিবেচনা করে বলেন- “Culture is that complex whole which includes knowledge, beliefs, arts, morals, law, custom, behaviour and any other capabilities and habits acquired by man as a member of society.”

মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সংস্কৃতির উপাদানঃ মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে Culture হলাে সমাজের Super structure বা ওপরি কাঠামাে। তাদের মতে, কেবল Economic base of the society হলাে সমাজের কাঠামাে। এ ছাড়া বাকি সব Art, law, culture হলাে ওপরি কাঠামো। যাকে Kroeber বলেছেন Super organic.

সুতরাং উপরে উল্লেখিত সমাজ বৈজ্ঞানিক, নৃ-বৈজ্ঞানিক, পশ্চিমা গবেষক ও মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করে আমরা Culture-এর দুটো মৌলিক দিক লক্ষ্য করি। একটি হলাে বস্তুগত উপাদান এবং অন্যটি হলাে অবস্তুগত উপাদান।


মানুষের এ বস্তুগত সংস্কৃতি পৃথিবীর অঞ্চল ও সমাজভেদে বিভিন্ন রকম হয়। যেমনঃ আমাদের বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই, এ দেশের অঞ্চলভেদে বস্তুগত সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে। এ দেশের শহরাঞ্চলে যেমন: পাকা ঘর-বাড়ি, শিল্প কল কারখানা স্থাপিত হয়েছে, গ্রামে তা হয়নি। আবার গ্রামীণ সমাজের কতক স্থানে টিনের ঘরবাড়ি, কতক স্থানে মাটির কঁচাবাড়ি লক্ষ্য করা যায়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালন করে থাকে। আর সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালন করতে গিয়েই সৃষ্টি হয় সংস্কৃতির উপাদান। এই উপাদান হতে পারে কখনাে বস্তুগত ও আবার কখনাে অবস্তুগত। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়ােজনে ব্যবহারিত প্রত্যেকটি বস্তুকেই সংস্কৃতির উপাদানের পদমর্যাদায় ফেলানাে সম্ভব। আর এই উপাদানের সমন্বিত রূপই হলাে সংস্কৃতি, যা মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে ভিন্নতর করেছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক