“মানুষ হও” -উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর


প্রশ্নঃ “মানুষ হও” -উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ আধুনিক কালের পূর্ণতাবাদ বা কল্যাণবাদের প্রসিদ্ধ চিন্তাবিদ হলেন হেগেল। তার ভাববাদের উপর ভিত্তি করেই তার নীতিদর্শন স্থাপিত। তিনি মনে করেন যে, পরমাত্মা বা পরমসত্তাই একমাত্র স্বনির্ভর সত্তা এবং জীবাত্মাও। জড়বস্তু পরমাত্মারই খণ্ড প্রকাশ মাত্র।

“মানুষ হও” (Be a person): “মানুষ হও”-এ উক্তিটির মাধ্যমে হেগেল স্বাতন্ত্রবােধ ও ব্যক্তিত্ববােধের মধ্যকার পার্থক্য দেখানাের চেষ্টা করেন। মুনুষ ও ইতর প্রাণী উভয়ই জীব বলে তাদের উভয়েরই মাঝে স্বাতন্ত্র্যবােধ আছে। মানুষের মধ্যে এই স্বাতন্ত্র্যবােধ থাকার কারণে মানুষ ইতর প্রাণীর মতাে নিজের স্বার্থ বা স্বাতন্ত্রকে বজায় রাখে। যার ফলে অপর মানুষের স্বার্থের কথা সে চিন্তা করে না এবং পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মিলিত হয়। মানুষ যেহেতু উন্নতর জীব সেহেতু এই স্বাতন্ত্র্যবােধ মানুষের যথাসর্বস্ব নয়, বরং উন্নতর জীব হিসেবে তার মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যও রয়েছে। উচ্চতর জীব হিসেবে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের পাশাপাশি অবস্থান রয়েছে। কিন্তু নিম্নতর জীবের মধ্যে কেবল স্বাতন্ত্র্যবােধ রয়েছে কিন্তু কোনাে ব্যক্তিত্ববােধ নেই। মানুষের ভিতরে এই ব্যক্তিত্ববােধ আছে বলে। সমাজের অপরাপর মানুষের সাথে সে কাধ মিলিয়ে চলতে চায়। মানুষ আত্মােৎসর্গের মধ্য দিয়ে অপরাপর ব্যক্তির কল্যাণ সাধনের চেষ্টা করে আত্মেবিস্তৃতি লাভের চেষ্টা করে। এটাই মানুষের মানুষ হিসেবে বৈশিষ্ট্য এবং এটাই মানুষের ব্যক্তিত্ব। কামনা-বাসনা জাতীয় জীববৃত্তিমূলক প্রবৃত্তিকে বুদ্ধির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত করে আত্মােপলব্ধির মাধ্যমেই মানুষের প্রকৃত স্বরূপ ফুটে উঠে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজে বসবাস করতে হলে মানুষকে আত্মেসর্গের মধ্য দিয়ে অপরাপর ব্যক্তির কল্যাণ সাধণ করার চেষ্টা করতে হবে। এটা মানুষের চরিত্রিক এবং বংশগত বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। হেগেল তাই সময়ের প্রেক্ষাপটে একটা সুন্দর উক্তি করেছেন “মানুষ হও”।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক