“বাঁচার জন্য মরাে”-উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর


প্রশ্নঃ “বাঁচার জন্য মরাে”-উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ নীতিদার্শনিক হেগেলের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি হলাে “মানুষ হও” এবং “বাঁচার জন্য মরাে”। এ উক্তিগুলোর মাধ্যমে হেগেল মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির উপর সর্বোচ্চ আলােকপাত করেছেন। জীবনের পূর্ণতা লাভ করাই মানব জীবনের পরম আদর্শ বা লক্ষ্য। আত্মােপলব্ধির মাধ্যমেই জীবনে পূর্ণতা আসে।

“বাঁচার জন্য মরাে” [Die to live]: “বাচার জন্য মরাে” এ উক্তিটির মাধ্যমে হেগেল একথা বুঝাতে চান যে মানুষকে যদি মানুষের মত বাঁচতে হয়, তাহলে তাকে ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তিমূলক জীবনের অবসানের মাধ্যমেই তা করতে হবে। মানুষের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি মূলক জীবন হলাে নিম্নতর জীবন। মানুষের এই নিম্নতর জীবনই ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা ও স্বার্থপরতার জীবন। মানুষের এই নিম্নতর জীবনই অপরাপর মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে রাখে এবং তার মধ্যে একটা আত্মকেন্দ্রিকতার ভাব জেগে উঠে। এই নিম্নতর জীবনের অবসান ঘটাতে না পারলে মানুষ আত্মবিস্তৃতি লাভ করতে পারে না। যার ফলে যে জীবনের বৃহত্তর স্বাদও গ্রহণ করতে পারে না। ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তিমূলক জীবন মানুষের প্রকৃত জীবন নয়। মানুষের প্রকৃত জীবন হলাে বুদ্ধিময় জীবন যে জীবনে ক্ষুদ্রতার, তুচ্ছতার ও স্বার্থপরতার কোনাে স্থান নেই। এই প্রকৃত জীবনই মানুষকে অপরাপর মানুষের সঙ্গে একাত্মবােধের কথা বলে। আত্মকেন্দ্রিক জীবনকে পরিহারের মাধ্যমে মানুষ জীবন গড়ে তুলতে পারে। “বাচার জন্য মরাে” এ উক্তিটির মাধ্যমে হেগেল আরও বলেন যে, আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর জীবন পরিহার করে সহ্য জীবনের অধিকারী হওয়া যায়।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বিচার বুদ্ধির দ্বারা কামনা-বাসনা জাতীয় ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করার মধ্য দিয়েই মানুষ তার আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা পরিহার করতে পারে এবং ফলে সে সহ্য জীবন যাপন করতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক