মুহাম্মদ (স)-এর অর্থনৈতিক সংস্কারগুলাে সংক্ষেপে আলােচনা কর


প্রশ্নঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর অর্থনৈতিক সংস্কারগুলাে সংক্ষেপে আলােচনা কর। 

উপস্থাপনাঃ হযরত মুহাম্মদ (স)-এর দুনিয়ায় আবির্ভাব ঘটেছিল বিশ্ব মানবের ত্রাণকর্তা হিসেবে। তিনি ছিলেন বিশ্বের জন্য রহমত। তাই তিনি আরবের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মহাসংস্কার সাধন করেছিলেন। ঐতিহাসিক রায়মন্ড লার্জ বলেন- The founder of Islam is, in fact the promoter of the first social and international revolution of which history gives mention.

মুহাম্মদ (স)-এর অর্থনৈতিক সংস্কারঃ

ক. নীতিসম্মত ধনাঞ্জন বিধানঃ হযরত মুহাম্মদ (স) সমাজ থেকে অথনােতক বৈষম্য দূর করে সঞ্চয় ও বণ্টনের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করেন। তিনি মুসলমানদের নীতিসম্মত উপায়ে ধনার্জন এবং সদকা ও যাকাতের মাধ্যমে সেই সম্পদের কিছু অংশ অপরিহার্যভাবে গরিবদের মধ্যে বিতরণের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “ধনীদের সম্পদে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।”

খ. রাজস্ব সংস্কারঃ একটি সুষ্ঠু ও জনকল্যাণকর রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তােলার ক্ষেত্রে মহানবী (স)-এর ভূমিকা অপরিসীম। রাজস্বের উৎস হিসেবে তিনি যাকাত, জিযিয়া, ফিতরা, সাদকা, ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করেন। ফলে রাজস্ব ব্যবস্থার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

গ. ভূমি সম্পত্তির আইনঃ পতিত ও অনাবাদী জমি যাতে উৎপাদনহীন পড়ে না থাকে সেজন্য রাসূল (স) প্রত্যেক পতিত ও অনাবাদী ভূমিতে উৎপাদন কর্মে সকলকে উৎসাহিত করেন।

ঘ. অর্থোপার্জন নিয়ন্ত্রণঃ মহানবী (স) আল কুরআনের ঘােষণার অর্থানুযায়ী আয় উপার্জনের সকল অবৈধ উৎসসমূহকে বন্ধ করে দেন। যেমন-

১. ঘুষ, সুদ, জুয়া, লটারি, মদ, শূকর ইত্যাদি হারাম ঘােষণা করেন।

২. মজুদদারি ও কালােবাজারি বন্ধ ঘােষণা করেন।

৩. অবৈধ বস্তুর ব্যবসা ও প্রতারণার মাধ্যমে আয় রােজগারকে নিষিদ্ধ করেন।

৪. হালাল উপার্জনে উৎসাহিত করেন।

৫. পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার বিশেষ তাকিদ দেন।

৬. শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের অধিকার স্বীকার করেন।

ঙ. অর্থ ব্যয় নিয়ন্ত্রণঃ মহানবী (স) অর্থ উপার্জনের উৎসসমূহ নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সাথে অর্থ ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরােপপূর্বক ব্যয়ের খাতগুলাে নির্ণয়ের ব্যবস্থা করেন। যেমন-

১. অপচয় রােধে তাকিদ প্রদান করেন।

২. মদ, জুয়া ইত্যাদি গর্হিত কাজে অর্থ ব্যয় নিষিদ্ধ করেন।

৩. সুপথে ও কল্যাণের পথে অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ দেন।

৪. দুঃস্থ বিপন্ন মানবতার সেবায় অর্থ ব্যয়ে উৎসাহিত করেন।

৫ অর্থনৈতিক অধিকার ও হকদারের হক আদায় করার নির্দেশ দেন।

চ. অর্থ সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞাঃ মহানবী (স)-এর অর্থনৈতিক সংস্কারের উল্লেখযােগ্য আরেক দিক হলাে- উপার্জিত সম্পদ কল্যাণের পথে ব্যয় না করে কেবল সঞ্চয় করে পুঞ্জীভূত তহবিল গড়ে তােলাকে নিষেধ করেন।

ছ. অর্থনীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণঃ মহানবী (স)-এর অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্যে অর্থনীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণ অন্যতম। যেমন-

১. যাকাত ব্যবস্থা চালু।

২. খারাজ ও উশর ব্যবস্থা চালু।

৩. গণীমত ও বিজিত সম্পদ বণ্টন।

৪. জিযিয়া কর চালু।

৫. আল ফাই ব্যবস্থা।

৬. সদকা ও ফিতরা ব্যবস্থার প্রবর্তন।

৭. উত্তরাধিকারি নীতির মাধ্যমে সম্পদের বণ্টন।

৮. শাসন কার্যের প্রয়ােজনে অন্যান্য কর আরােপের ব্যবস্থা।

৯. সর্বপ্রকার অসাধুতা নিষিদ্ধকরণ।

উপসংহারঃ মহানবী (স) শুধু একজন ধর্ম প্রচারকই ছিলেন না; বরং তিনি একজন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। ফলে তিনি একটি শক্তিশালী জাতি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছেন। ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন- His life is the noblest record of a work nobly and faithfull performed.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক