অথবা, ম্যাকিয়াভেলীকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয় কেন? আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ ম্যাকিয়াভেলী ছিলেন আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অগ্রদূত। ম্যাকিয়াভেলীই প্রথম ব্যক্তি যিনি মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনার বেড়াজাল থেকে বাস্তবধর্মী চিন্তার সমাহার ও আধুনিক কিছু মতবাদের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাই তাকে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক বলা হয়।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক হিসেবে ম্যাকিয়াভেলিঃ নিম্নে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক হিসেবে ম্যাকিয়াভেলির অবদান উল্লেখ করা হলো-
(১) জাতীয় রাষ্ট্রের প্রথম প্রবক্তাঃ ম্যাকিয়াভেলি জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা দিলে তা সমগ্র ইউরােপে আলােড়ন সৃষ্টি করে। তিনি বহুধাবিভক্ত ইতালিকে একত্রিত করতে একটি শক্তিশালী জাতীয় রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রদান করেন। তার এই রাষ্ট্রদর্শন আধুনিককালেও সর্বজনস্বীকৃত।
(২) অভিজ্ঞতাবাদীঃ অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রতিটি বিষয় যাচাই করে দেখার মাধ্যমে তিনি সর্বদা সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন। তার চিন্তাধারার পরিচয় মেলে তৎকালীন ইতালির আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা পর্যাবেক্ষণের মাধ্যমে।
(৩) উপযােগবাদীঃ অভিজ্ঞতার আলােকে ম্যাকিয়াভেলী সবকিছু বিচার করতেন। তার মতে, অভিজ্ঞতাই বিচার করবে কোনাে কিছুর উপযােগিতা বা প্রয়ােজনীয়তা আছে কিনা।
(৪) সর্বাত্মকবাদীঃ ম্যাকিয়াভেলি রাষ্ট্রের প্রয়ােজনে শাসককে চরম ক্ষমতার অধিকারী করেছেন। তার মতে, শাসক ব্যক্তিকল্যাণ অপেক্ষা রাষ্ট্রের কল্যাণকে সর্বদা বড় করে দেখবে। আর রাষ্ট্রের এ ক্ষমতা সর্বাত্মকবাদের জন্ম দেবে।
(৫) রাজনীতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তিঃ ম্যাকিয়াভেলি সর্বপ্রথম রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার চিন্তাধারায় এরিস্টটলের মতাে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মিল পাওয়া যায়।
(৬) আইনের শাসনঃ ম্যাকিয়াভেলি আইনের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। ম্যাকিয়াভেলি মনে করেন, একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে শক্তিশালী আইন প্রণেতার প্রয়ােজন।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ম্যাকিয়াভেলীবাদ ছিল মধ্যযুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। তার এই মতবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলাে ধর্ম ও নৈতিকতা। ধর্ম ও নৈতিকতাকে রাজনীতি থেকে পৃথক করা ম্যাকিয়াভেলীর পূর্বে অপর কোন দার্শনিকের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। তার এই মতবাদ পরবর্তীতে রাষ্ট্র চিন্তাবিদদের খােরাক যুগিয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ