সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Decision Making): সিদ্ধান্ত উপায়মূলক এবং উদ্দেশ্যমূলক উভয় প্রকার হতে পারে। উদ্দেশ্য যখন নির্দিষ্ট থাকে তখন তা অর্জনের জন্য প্রশাসককে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় তাকে উপায়মূলক সিদ্ধান্ত বলা হয়। অপরদিকে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ ঘটনাবলিকে ভিত্তি করে যখন কোন উদ্দেশ্য স্থির করতে হয়, কিংবা উপায় এবং উদ্দেশ্য উভয়ই নির্ধারণ করতে হয় তখন তাকে উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্ত বলা হয়৷ সিদ্ধান্তের বৈশিষ্ট্যগুলো মোটামুটি নিম্নরূপঃ
১। সিদ্ধান্ত হচ্ছে সমাপ্ত প্রক্রিয়া। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তীক্ষ্ণ বিচার-বুদ্ধির প্রয়োজন।
২। সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিকল্প সমাধানগুলোর মধ্য হতে শ্রেষ্ঠটিকে বেছে নেয়া বুঝায়৷
৩। সিদ্ধান্ত হ্যাঁ-বাচক বা না-বাচক হতে পারে । কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ হতে বিরত থাকাও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামিল।
৪। সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্য উপনীত হবার এবং উদ্দেশ্য নির্ণয়মূলক অথবা উভয়ই হতে পারে।
সিদ্ধান্ত জটিল প্রশ্নের একমাত্র জবাব। সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি বিষয়ের পরিসমাপ্তি ঘটে। বস্তুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট পথে প্রগতির যাত্রারম্ভ। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে প্রগতি নানা প্রতিকূল এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হাতে পর্যুদস্ত হতে থাকে এবং অনিশ্চিত ভাগ্যের কবলিত হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের অব্যবহিত পরেই প্রগতি তার স্বকীয় সত্তার উজ্জীবনে সমস্ত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের পানে ধাবিত হয়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রকৃতির (Nature of Decision Making): সিদ্ধান্ত হলো পছন্দ করা বা বাছাই করা। বিরুদ্ধ শক্তিকে পরাজিত করার মানসে অনেকগুলো বিকল্প সমাধানের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়া। বেছে নেয়ার প্রশ্ন না উঠলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্ন ও অবান্তর হয়ে যায়। সংগঠনের লক্ষ্য কি করে অধিকতর সফলতার সাথে অর্জন করা যায় তা-ই হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আসল উদ্দেশ্য৷
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে প্রশাসককে গভীরভাবে চিন্তা এবং বিচক্ষণতার সাথে ফলাফল হিসাব করে নিতে হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পরিণত চিন্তার প্রয়োজন হলেও তার আনুষঙ্গিক অনেক কার্য সচেতন চিন্তার ফসল নয়, এগুলো স্বতঃস্ফূর্ত এবং এদের প্রক্রিয়া প্রশাসকের নিকট অজ্ঞাত থাকে।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সমস্যার অনেকগুলো উপায় থাকতে পারে। এদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্টটি বেছে নেয়াই সিদ্ধান্ত। সম্ভাব্য বহু সমাধানের মধ্যে কোনটি লক্ষ্য অর্জনের পক্ষে সর্বাপেক্ষা সুবিধাজনক হবে তা নির্ণয় করতে পরিণত চিন্তা এবং তীক্ষ্ণ বিচার-বুদ্ধির একান্ত আবশ্যক। বস্তুত সর্বোৎকৃষ্ট কর্মপন্থা অবলম্বন করতে বিকল্প সমাধানগুলো উদ্ভাবন করার ক্ষমতা প্রশাসকের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা। অবশ্য যেখানে কোন বিকল্প উপায় নেই সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুবই সহজ কাজ। তাছাড়া কোন কিছু করা থেকে বিরত থাকার সংকল্পকেও সিদ্ধান্ত বলা হয় । কাজেই সিদ্ধান্ত হ্যাঁ-বাচক কিংবা না-বাচকও হতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ