প্রশ্ন: রাজনীতি অধ্যয়নে সনাতন পদ্ধতি যথেষ্ট নয়—এ প্রসঙ্গে এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
ভূমিকা: তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নের ধারণা প্রাচীন হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়েছে। উৎপত্তিকালে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার হতো, সেগুলোকে সনাতন বা গতানুগতিক পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতির নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এর প্রাণ বলা যায়। তবে আধুনিক রাজনৈতিক জটিলতা বিশ্লেষণে সনাতন পদ্ধতি একার যথেষ্ট নয়।
সনাতন পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্যঃ
১. বর্ণনা প্রধান আলেখ্য: মূল লক্ষ্য ছিল নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা। তুলনামূলক আলোচনা প্রায় করা হতো না। গ্রন্থে সাধারণত ঘটনার দিন, তারিখ, আইনগত দলিল ইত্যাদি উল্লেখ থাকত।
২. সংকীর্ণতা: সনাতন পদ্ধতি সীমিত অঞ্চলের রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। ইউরোপের সরকার ব্যবস্থাই ছিল মূল আলোচ্য বিষয়।
৩. ঐতিহাসিক: রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থার অতীত এবং বর্তমানের অবস্থা বর্ণনা করা হয়। ভবিষ্যৎ বা পরিবর্তনশীল দিক নিয়ে আলোচনা প্রায় ছিল না।
৪. অতুলনামূলক: সনাতন পদ্ধতিতে কোনও দেশের সরকারের প্রকৃতি বা বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলি আলোচনা করা হলেও তা তুলনামূলক ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলেও বিশ্লেষণাত্মক তুলনা করা হতো না।
৫. রক্ষণশীলতা: শুধু স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় উপাদানের উপর জোর দেওয়া হতো। পরিবর্তন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিকে নজর দেওয়া হতো না।
৬. বহিরাকৃতিমূলক: রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক কাঠামো এবং কার্যাবলির দিকে মনোযোগ দেওয়া হতো। প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তর্নিহিত দিক বিশ্লেষণ করা হতো না।
৭. তত্ত্বের প্রতি ঔদাসীন্য: সনাতন পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণমূলক তত্ত্ব গঠন বা পরীক্ষামূলক বিশ্লেষণের কোনো প্রচেষ্টা ছিল না।
৮. পদ্ধতি সম্পর্কে ঔদাসীন্য: উপাত্ত সংগ্রহ, নির্বাচন এবং সংহতকরণের কোনও সুসংগঠিত নীতি ছিল না। বিশ্লেষণ অনিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও অনির্ভরযোগ্য তথ্যের উপর নির্ভর করত।
উপসংহার: সনাতন বা গতানুগতিক পদ্ধতি আধুনিক রাজনৈতিক জটিলতা বিশ্লেষণে যথেষ্ট নয়। তবে ইতিহাসের শিক্ষা ও অতীতের রাজনৈতিক ঘটনা বিশ্লেষণে এ পদ্ধতির অবদান গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, সনাতন পদ্ধতির ব্যবহার এখনও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।
0 মন্তব্যসমূহ