“মার্কিন সিনেট বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ”- বলার কারণসমূহ আলোচনা কর


প্রশ্নঃ “মার্কিন সিনেট বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ”- বলার কারণসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, মার্কিন সিনেটকে কেন বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ বলা হয় আলােচনা কর।

অথবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটকে তুমি কি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ বলে মনে কর? তোমার উত্তরে সপক্ষে যুক্তি দাও।

অথবা, মার্কিন সিনেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ কর। এটা কি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্বিতীয় কক্ষ? আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের নাম সিনেট। এ কক্ষকে অঙ্গরাজ্যসমূহের প্রতিনিধিত্বমূলক কক্ষও বলা হয়ে থাকে। মার্কিন সিনেট প্রতিনিধি সভার তুলনায় অধিক শক্তিশালী। শুধু তাই নয়, মার্কিন সিনেট বিশ্বের অন্যান্য দেশের দ্বিতীয় কক্ষের তুলনায় অধিক ক্ষমতাশালী। তাই মার্কিন সিনেটকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ বলা হয়।

বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ হিসেবে সিনেটঃ সিনেটকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কথ বলার কারণসমূহ নিচে উল্লেখ করা হল-

১. অইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেঃ রাশিয়া ও সুইজারল্যান্ডের আইনসভার উভয় কক্ষ সমক্ষমতাসম্পন্ন। ভারত ও ব্রিটেনের উচ্চ কক্ষ নিকক্ষ অপেক্ষা দুর্বল। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ কক্ষ সিনেট নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এছাড়া অর্থবিলের উপর সিনেটের যে ক্ষমতা রয়েছে ভারত, ব্রিটেন এবং আরও অনেক রাষ্ট্রের উচ্চ কক্ষের সেরূপ ক্ষমতা নেই। এজন্য J. P. Harris বলেছেন, "The United States senate is by all odds the most powerful upper chamber of any legislature in the world."

২. প্রশাসনিক ক্ষেত্রেঃ ভারত ও ব্রিটেনের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আইনসভার নিম্নকক্ষের হাতে ন্যস্ত। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কোন নিয়ােগ বৈদেশিক চুক্তি অনুমােদন না করলে তা কার্যকরী হয় না। অন্য কোন দেশের দ্বিতীয় কক্ষকে এরূপ ক্ষমতা দেয়া হয় নি।

৩. বিচারের ক্ষেত্রেঃ সিনেট প্রতিনিধি সভা কর্তৃক অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অভিযােগ অনুসন্ধান ও বিচার করে থাকেন। কিন্তু ভারতের উচ্চ কক্ষ অভিযোেগ আনলে নিম্নকক্ষ তার বিচার করে। সুতরাং সিনেটের বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা ভারতের উচ্চ কক্ষের তুলনায় অনেক বেশি।

৪. বিভিন্ন বিল উত্থাপনের ক্ষেত্রেঃ কানাডায় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একমাত্র অর্থবিলই সিনেটে উত্থাপিত হয়। এছাড়া যে কোন বিল সিনেট ছাড়া কমন্সসভায় উত্থাপিত হতে পারে। কানাডার সিনেটের সদস্যগণ গভর্নর জেনারেল কর্তৃক মনােনীত হন। অন্যদিকে, কমন্সসভার সদস্যগণ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি। এক্ষেত্রে সিনেটের ক্ষমতা কমন্সসভার চেয়ে অনেক কম। এদিক থেকে কানাডার সিনেট অপেক্ষা মার্কিন সিনেট অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই মার্কিন সিনেটকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্বিতীয় শক্তিশালী কক্ষ বলা যায়।

৫. মর্যাদার দিক থেকেঃ অস্ট্রেলিয়ার আইনসভার ক্ষেত্রে সাধারণ বিলগুলাে এমনকি অর্থবিলও প্রতিনিধি সভায় উত্থাপিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিনেটের নিয়ােগ ও চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন ক্ষমতা নেই। উভয় কক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলে গর্ভনর জেনারেল উভয় কক্ষ ভেঙে দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেন। এক্ষেত্রে সিনেটের তুলনায় প্রতিনিধি সভার সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদেরই জয় হয়। কিন্তু এদিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিনেট অপেক্ষা মার্কিন সিনেট অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই মার্কিন সিনেটকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্বিতীয় শক্তিশালী কক্ষ হিসেবে অভিহিত করা যায়।

উপসংহারঃ উপযুক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেট একটি শক্তিশালী কক্ষ। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের উচ্চ কক্ষের সাথে তুলনামূলক আলােচনাতে দেখা যায় যে, সিনেট বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ। এ কারণে Prof. C. F. Strong বলেছেন, "The powers of the senate are very great probably no second chamber in the world today has an influence so real and direct." সুতরাং সিনেটকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ হিসেবে অভিহিত করা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক