ই-গভর্নেন্স-এর বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর


প্রশ্নঃ ই-গভর্নেন্স-এর বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষের চিন্তা-চেতনা, জীবনযাত্রা, চিকিৎসাশাস্ত্রসহ সকল ক্ষেত্রে নবদিগন্তের উন্মোচন করে চলেছে। বিজ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করার সাধনা থেকে ঘটে প্রযুক্তির বিকাশ। বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আজ মানুষের জীবনযাত্রার ধরন ও মান পাল্টে দিয়েছে। রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনের ওপরও প্রযুক্তির প্রভাব পড়েছে বহুলভাবে। এ প্রেক্ষাপটে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর 'ই-গভর্নেন্স' নামক এক নতুন ধারণার উদ্ভব ঘটেছে।


ই-গভর্নেন্স-এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of E-Governance): ই-গভর্নেন্স সম্পর্কে আলোচনা করলে এর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো চোখে পড়ে। এগুলো নিম্নরূপঃ


১. ইলেক্ট্রনিক গভর্নেন্সঃ ই-গভর্নেন্স শব্দটি এসেছে Electronic Governance থেকে। বাংলায় একে বলা হয় ইলেক্ট্রনিক বা প্রযুক্তিনির্ভর শাসন। এ শাসন বা সরকার পরিচালনায় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি বা কৌশল প্রয়োগই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। 


২. অনলাইন গভর্নেন্সঃ অনলাইনের মাধ্যমে পাবলিক ডেলিভারি ও সেবা জনগণের কাছে সহজলভ্য করাই ই-গভর্নেন্স-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। 


৩. প্রযুক্তিনির্ভরঃ ই-গভর্নেন্স-এর প্রক্রিয়া আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারের কর্মসম্পাদনে ব্যাপক পরিবর্তন ও সংস্কার আনয়ন করা হয়। 


৪. সেবার মান উন্নয়নঃ ই-গভর্নেন্স-এর লক্ষ্য হলো জনগণকে প্রদত্ত সেবার মান উন্নয়ন করা। এর মাধ্যমে জনগণকে সার্বক্ষণিক সুবিধা দেয়া সম্ভব। 


৫. সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিঃ ই-গভর্নেন্স-এর লক্ষ্য হলো সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মদক্ষতা 

করা। অনলাইনের মাধ্যমে পাবলিক ডেলিভারি ও সেবা সহজে জনগণের নিকট পৌছে দেয়ার ফলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। 


৬. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে অগ্রাধিকার উন্নয়নঃ ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠিত হলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হয়। 


৭. স্বচ্ছতাঃ ই-গভর্নেস সরকারের স্বচ্ছতাকে সুনিশ্চিত করে। ফলে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হয়। 


৮. দ্বিমুখী যোগাযোগঃ ই-গভর্নেন্স সরকার ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বি-মুখী যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে। এ প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে ইন্টারনেট সংলাপে বসতে পারে এবং তাদের সমস্যা, মন্তব্য ও অনুরোধ প্রতিষ্ঠানকে জানাতে পারে। 


৯. লেনদেন পরিচালনা, ফরন জনা দেয়াঃ ই-গভর্নেন্স-এর সহযোগিতায় আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া, চাকরির জন্য আবেদন চাওয়া ও তা জন্য দেয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য করন জমা দেয়া এবং অনুদান চাওয়া ও তা প্রদান করাসহ বিভিন্ন ধরনের লেনদেন পরিচালনা করা সম্ভ। 


১০. সরকার পরিচালনায় জন অংশগ্রহণঃ ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা তথা তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য গ্রহণ করে জনগণ প্রত্যক্ষভাবে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে। 


১১. সুশাসনের সহায়কঃ ই-গভর্নেন্স সুশাসনের সহায়ক। ই-গভর্নেন্স সুশাসন নিশ্চিত করে। 


উপসংহারঃ ই-গভর্নেন্সে স্বচ্ছতার বিষয়টিকে বড় করে দেখা হয়। সরকারের প্রশাসনিক সংগঠনগুলোতে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে এবং মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনয়ন করা প্রয়োজন। সরকার কী কী কাজ করছে, কেন করছে, কী কী মূলনীতির ওপর সরকার সিদ্ধান্ত বা নীতি প্রণয়ন করছে তা জনগণের জানা প্রয়োজন। ই-গর্ভনেন্স তা জানতে সাহায্য করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক