ভূমিকা : রাজনৈতিক ব্যবস্থা ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করায় রাজনীতি অধ্যয়নের পদ্ধতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে তুলনামূলক রাজনীতি নতুন নতুন মতবাদ, বিশ্লেষণ কাঠামো ও মৌলিক তত্ত্ব দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে। আধুনিক এই বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির মধ্যে যোগাযোগ তত্ত্ব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এ তত্ত্বের গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ তত্ত্বের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা হলেন কার্ল ডুয়েশ্চ, যাকে যোগাযোগ তত্ত্বের জনক বলা হয়।
কার্ল ডুয়েশ্চের যোগাযোগ তত্ত্ব : কার্ল ডুয়েশ্চ তাঁর The Nerves of Government এবং Nationalism and Social Communication গ্রন্থে যোগাযোগ তত্ত্বের বিশদ আলোচনা করেছেন। তিনি রাজনৈতিক ব্যবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগের ভূমিকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
১. কারিগরি যোগাযোগ বনাম কারিগরি শক্তি : ডুয়েশ্চ প্রথমে কারিগরি শক্তি ও কারিগরি যোগাযোগের মধ্যে পার্থক্য করেন। তাঁর মতে, কারিগরি শক্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হয় ব্যবহৃত শক্তির সমানুপাতিক হারে। কিন্তু কারিগরি যোগাযোগে সামান্য শক্তি ব্যয় করেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হয়।
২. সাইবারনেটিক্সের প্রভাব : ডুয়েশ্চ নরবার্ট ওয়েনারের সাইবারনেটিক্স ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হন। সাইবারনেটিক্স হলো একপ্রকার আত্মনিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ-প্রক্রিয়া, যা মানুষের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের মতো কাজ করে। এটি উত্তেজনা (stimuli) গ্রহণ করে, বিশ্লেষণ করে এবং অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নির্ধারণ করে।
৪. রাজনীতিতে যোগাযোগের ভূমিকা :
-
রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের মাধ্যমে কাজ করে।
-
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কার্যকর যোগাযোগ অপরিহার্য।
-
সরকার ও নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্কের স্থায়িত্বও তথ্য প্রবাহের ওপর নির্ভর করে।
-
একটি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা অনেকাংশেই তার যোগাযোগ ব্যবস্থার শক্তি ও দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল।
উপসংহার : উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, কার্ল ডুয়েশ্চের যোগাযোগ তত্ত্ব আধুনিক রাজনৈতিক বিশ্লেষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করেছে। এটি শুধু সরকারের প্রকৃতি ও কার্যাবলি বিশ্লেষণেই নয়, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, নীতিনির্ধারণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বোঝার ক্ষেত্রেও সহায়ক। ফলে তুলনামূলক রাজনীতি বিশ্লেষণে যোগাযোগ তত্ত্বের মাধ্যমে এক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অন্য রাষ্ট্রের সাথে সহজেই তুলনা করা সম্ভব হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ