প্রশ্ন : কার্ল ডুয়েশ্চের যোগাযোগ তত্ত্বের বিভিন্ন দিক আলোচনা কর।
ভূমিকা : কার্ল ডুয়েশ্চ তুলনামূলক রাজনীতি বিশ্লেষণে যোগাযোগ তত্ত্ব প্রবর্তন করে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা কেবল শক্তির ব্যবহার নয় বরং তথ্য ও যোগাযোগের উপর নির্ভরশীল। যোগাযোগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রেরণ ও প্রতিক্রিয়া প্রদান করে থাকে। তিনি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে একটি আত্মনিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হিসেবে দেখেছেন, যার কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে যোগাযোগ অপরিহার্য।
যোগাযোগ তত্ত্বের বিভিন্ন দিক :
১. উপব্যবস্থা (Subsystem): রাজনৈতিক দল, স্বার্থ-গোষ্ঠী, গণমাধ্যম ইত্যাদির সমন্বয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ কাঠামো গঠিত হয়। ডুয়েশ্চ এসবকে ক্ষুদ্র স্তরের যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এগুলো পরস্পর সংযুক্ত ও উন্মুক্ত, যা রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিকাশ ও অগ্রগতিকে প্রভাবিত করে।
২. তথ্য প্রবাহ ও প্রতিক্রিয়া (Flow and Feedback): ডুয়েশ্চের মতে, রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামো বোঝার জন্য অতীত ও বর্তমান অভিজ্ঞতা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। এ তথ্যের প্রবাহ ধারাবাহিক হতে হবে এবং তা অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত পরিবেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে। তথ্য ও প্রতিক্রিয়ার ভারসাম্য রক্ষা না হলে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।
৩. স্মৃতি ভাণ্ডার (Memory Bank): রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে তিনি একটি আত্মনিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ কারণে রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি স্মৃতি ভাণ্ডার থাকা জরুরি, যা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারণে সহায়ক হয়।
৪. পরিবেশের প্রতি সাড়া (Response to Environment): ডুয়েশ্চ মনে করেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা নির্ভর করে পরিবেশের পরিবর্তনের প্রতি সক্রিয়ভাবে সাড়া দেওয়ার ওপর। কেবল কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমেই এ সাড়া দেওয়া সম্ভব।
৫. তথ্য ও প্রযুক্তির গুরুত্ব (Role of Information and Technology): তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও বিকাশে যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বল্প শক্তি ব্যয় করেও কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে বৃহৎ পরিবর্তন আনা সম্ভব।
উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায়, কার্ল ডুয়েশ্চ রাজনৈতিক ব্যবস্থার কার্যাবলি বিশ্লেষণে যোগাযোগ ও তথ্য প্রবাহকে কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান দিয়েছেন। তথ্য প্রবাহ, প্রতিক্রিয়া, স্মৃতি ভাণ্ডার, উপব্যবস্থা এবং পরিবেশের সাথে সম্পর্ক—সবকিছু মিলেই রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকে থাকে ও বিকশিত হয়। তাই বলা যায়, যোগাযোগ তত্ত্ব তুলনামূলক রাজনীতি বিশ্লেষণে একটি আধুনিক ও প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গি।
0 মন্তব্যসমূহ