তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নে তুমি কোন পদ্ধতিকে গ্রহণযোগ্য মনে কর?


প্রশ্ন: তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নে তুমি কোন পদ্ধতিকে গ্রহণযোগ্য বা উত্তম বলে মনে কর?অথবা, তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নে মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি কেন উত্তম, তা ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন তত্ত্ব ব্যবহার করে থাকেন এবং বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা তুলনা করে রাজনীতির সঠিক এবং সময়োপযোগী দিকগুলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার গাইডলাইন হিসেবে ব্যবহার করার সুপারিশ করেন। তবে কোন পদ্ধতিতে রাজনীতি অধ্যয়ন সর্বাপেক্ষা যুক্তিসঙ্গত বা গ্রহণযোগ্য তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। এর মধ্যে তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নের মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিকে সর্বোত্তম বলে মনে করা হয়।

মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি: সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতি বিশ্লেষণে মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মূল ধারণা হলো—রাজনীতি মানুষের উপর নির্ভরশীল। মানুষের প্রকৃতি অধ্যয়নের মাধ্যমে রাজনীতির ব্যাখ্যা প্রদান করা যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মানুষের সচেতন ও অবচেতন মন অধ্যয়ন করে রাজনৈতিক জীবনের জটিলতা এবং উন্নয়ন সমস্যা ব্যাখ্যা করেন।

মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিকে উত্তম বলা হয় কারণঃ

১. মানব প্রকৃতির ইতিহাসগত গবেষণা: অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মন নিয়ে গবেষণার ইতিহাস শুরু হয়েছে। Plato তাঁর Republic গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের উৎপাদক, ভোক্তা ও শাসক শ্রেণীর বিভাজন মানব প্রকৃতির ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করেছেন। Aristotle সামাজিক জীব হিসেবে মানব প্রকৃতির দিক গুরুত্বসহকারে বিশ্লেষণ করেছেন। ফলশ্রুতিতে বর্তমান রাজনীতি অধ্যয়নে মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

২. আধুনিক রাষ্ট্রদার্শনিকদের প্রভাব: ম্যাকিয়াভেলী, হবস, লক, রুশো প্রমুখ দার্শনিকরা মানব প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রদর্শন উপস্থাপন করেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাষ্ট্রদর্শনের উপযোগবাদও মানব প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। এই কারণে মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

৩. ব্যক্তি ও সামাজিক আচরণের বিশ্লেষণ: মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি ব্যক্তির মন, প্রকৃতি ও আচরণ বিশ্লেষণ করে। এছাড়া একটি দলের বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে ব্যক্তির প্রকৃতি ও আচরণও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। সামাজিক মনোবিজ্ঞান এ ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

৪. নেতৃত্ব বিশ্লেষণ: নেতৃত্বের ধরন ব্যাখ্যায় মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম—কেন কোনো নেতা কর্তৃত্ববাদী বা গণতান্ত্রিক, এবং নেতার ব্যক্তিত্ব ও সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া কিভাবে তা প্রভাবিত করে।

৫. উন্নয়নমূলক সমস্যা ব্যাখ্যা: উন্নয়নশীল দেশে অনুন্নয়নের পিছনে নেতৃবৃন্দ ও জনগণের মনস্তত্ত্ব কতটুকু প্রভাবিত তা মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি সফলভাবে অনুসন্ধান করে। প্রয়োজনীয় সুপারিশও প্রদান করে।

৬. প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা নির্ধারণ: একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যবস্থার সফলতা বা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে তার কর্মরত ব্যক্তির মনস্তত্ত্বের উপর। মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা যায়।

৭. গণতন্ত্র ও সামাজিক আচরণের বিশ্লেষণ: গণতান্ত্রিক সমাজের চরিত্র এবং গণতন্ত্রের সম্ভাবনা বিশ্লেষণে মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি কার্যকর। গণতন্ত্রের সফলতার জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক সহনশীলতা, সহযোগিতা, আস্থা ইত্যাদি মানবগুণাবলির যথার্থ বিশ্লেষণ।

উপসংহার: আজকের দ্বন্দ্বপূর্ণ সমাজজীবন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষ স্বার্থপরতা, প্রতিযোগিতা এবং ক্ষতি-হ্রাস করার ক্ষেত্রে কিভাবে আচরণ করবে তা মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তাই বর্তমান রাজনীতি অধ্যয়নে মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিই সর্বোত্তম বলা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক