প্রশ্ন : কার্ল ডুয়েশ্চের যোগাযোগ তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
ভূমিকা : রাজনৈতিক ব্যবস্থা ক্রমে জটিল হয়ে উঠায় রাজনীতি অধ্যয়নের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে তুলনামূলক রাজনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন মতবাদ, কাঠামো ও মৌলিক তত্ত্ব দ্বারা। এই ধারায় যোগাযোগ তত্ত্ব একটি আধুনিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ এ তত্ত্বকে আরও কার্যকর করেছে। কার্ল ডুয়েশ্চ এ তত্ত্বের মূল প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত।
যোগাযোগ তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য : কার্ল ডুয়েশ্চের যোগাযোগ তত্ত্ব ডেভিড ইস্টনের সাধারণ সিস্টেম তত্ত্বের তুলনায় ভিন্ন ও সংশোধিত হওয়ায় এর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সেগুলো হলো—
১। রাজনীতির নতুন ব্যাখ্যা প্রদান – এ তত্ত্ব রাজনীতিকে ক্ষমতা-কেন্দ্রিক না ভেবে সামাজিক লক্ষ্য পূরণের প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
২। তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারের গুরুত্ব – এখানে সরকারের ভূমিকা দেখা হয়েছে তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ওপর; ব্যক্তির ওপর সরাসরি ক্ষমতা প্রয়োগের ওপর নয়।
৩। সামাজিক যোগাযোগের ওপর জোর – রাজনৈতিক ক্ষমতার মূল উৎস হিসেবে সামাজিক যোগাযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অতীত, বর্তমান ও সমসাময়িক সমাজের যোগাযোগই রাজনৈতিক শক্তির ভিত হিসেবে বিবেচিত।
৪। ফিডব্যাক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব – তথ্য প্রবাহ ও প্রতিক্রিয়া (Feedback) প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্থিতিশীলতার প্রধান উপাদান হিসেবে দেখা হয়েছে।
৫। স্মৃতি ও ঐতিহ্যের ভূমিকা – সংগৃহীত তথ্যের একটি অংশ জাতির স্মৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাস হিসেবে সংরক্ষিত হয় এবং ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।
সমালোচনা : যদিও এ তত্ত্ব তুলনামূলক রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে—
১। অত্যন্ত জটিল প্রকৃতি – এ তত্ত্ব প্রযুক্তিগত ও প্রকৌশল মডেলের অনুসরণে গড়ে ওঠায় সাধারণভাবে রাজনীতিতে প্রয়োগ করা কঠিন।
২। বৈপ্লবিক পরিবর্তন উপেক্ষা – এটি সামাজিক বিবর্তন ও ধারাবাহিকতার ওপর জোর দিলেও বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের বিশ্লেষণে অক্ষম।
৩। তান্ত্রিকতা – মানুষের সব কার্যকলাপকে যান্ত্রিক বা তান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যাখ্যা করার কারণে বাস্তব মানবীয় অনুভূতি ও জটিলতাকে অবহেলা করেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনায় বোঝা যায় যে, যোগাযোগ তত্ত্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থার তথ্য প্রবাহ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও স্থিতিশীলতা বোঝার কার্যকর উপায়। এটি সরকারের প্রকৃতি, কার্যাবলি ও ব্যবস্থার ধরন বিশ্লেষণে সহায়ক। তবে সীমাবদ্ধতার কারণে একে একমাত্র বিশ্লেষণ কাঠামো হিসেবে নির্ভর করা যায় না। তবুও তুলনামূলক রাজনীতির ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী অবদান।
0 মন্তব্যসমূহ