নেতৃত্ব বিষয়ক তত্ত্বসমূহ আলোচনা কর


প্রশ্নঃ নেতৃত্ব বিষয়ক তত্ত্বসমূহ আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ নেতৃত্ব একটি শিল্প। পৃথিবীতে এই শিল্পের কুশলীর অভাব প্রচন্ড। নেতৃত্ব শব্দটি ছোট্ট কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক। এই ছোট্ট শব্দটির প্রায়োগিক গুরুত্ব এত বেশি যে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র কোনো কিছুই এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারে না। যেকোনো সংগঠন, সমাজ বা রাষ্ট্রে সুষম উন্নয়ন ও এর ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছার কেবলমাত্র উপায় হলো একটি যোগ্য নেতৃত্ব।

নেতৃত্ব বিষয়ক তত্ত্বসমূহ (Theories About Leadership): নেতৃত্ব বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এ যাবৎ অনেক জ্ঞান গবেষণা হয়েছে এবং বহু সংখ্যক প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচিত হয়েছে । বিশেষত ১৯৩০ সালের পর হতে পরবর্তী ৫০ বছর ব্যাপী এ বিষয়ে জোরদার গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল। এমনকি অদ্যাবধি তার অব্যাহত চর্চা রয়েছে। ফলে নেতৃত্বের উপর অনেক তত্ত্ব ও মতবাদ সৃষ্টি হয়েছে এবং বিকাশ লাভ করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, বিষয়টি ক্রমেই জটিলতার দিকে ধাবিত হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য কোন তত্ত্ব কেউ দিতে পারেন নি। অথচ নেতৃত্বের তত্ত্ব ও মতবাদ নিয়ে মতানৈক্য ও বিভ্রান্তির ছড়াছড়ি। তদুপরি অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ তিনটি তত্ত্বের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এগুলো হলোঃ 

১। গুণাবলি তত্ত্ব (Trait Theory);
২। আচরণ তত্ত্ব (Behavioral Theory);
৩। অবস্থাভিত্তিক তত্ত্ব (Situational Theory)।

তবে উপরোক্ত তিনটি তত্ত্ব বিতর্ক ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় এবং এগুলোরও আদান যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সীমাবদ্ধতা। প্রথমোক্ত তত্ত্ব দু'টির সমালোচনায় ভিকট্র এইচ. ভ্ৰম (Victor H. Vroom) বলেছেন, মিথ্যা দিয়েই এদের সূচনা। কারণ ভুল এবং অতি সরলীকরণের উপর নেতৃত্বের এ তত্ত্বদ্বয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । নিচে এ তিনটি তত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ 

গুণাবলি তত্ত্ব (Trait Theory): একজন নেতাকে সার্থক নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন গবেষকগণ সেসব গুণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এ তত্ত্বকে গবেষকগণ ‘মহামানব' তত্ত্ব বলে চিহ্নিত করেছেন। সে অনুসারে একজন নেতা সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা। কারণ তার মধ্যে বিদ্যমান গুণগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। একজন নেতাকে যেসব গুণের অধিকারী হতে হবে তার মধ্যে সাহস, ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা, আত্মপ্রত্যয়, উৎসাহ, দূরদৃষ্টি এবং আকৃষ্ট করার শক্তি থাকেত হবে। অনেক প্রশাসন চিন্তাবিদ নেতার গুণ সম্পর্কে তালিকা প্রণয়ন করেছেন এবং এরূপ তালিকা সম্পর্কে চিন্তাবিদদের মধ্যে মতভেদও বিদ্যমান। বরং নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পর্কে একজন অন্যজন থেকে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। যাদেরকে আমরা নেতা বলে জানি তাদের প্রত্যেকেই এমন একজন ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে আমরা এক ধরনের নির্দিষ্ট গুণাবলি দেখতে পাই না বরং গুণাবলির দিক থেকে আমরা বৈষম্য লক্ষ্য করে থাকি। অন্যথায় যদি আমরা গুণাবলি তত্ত্বকে সঠিক তত্ত্ব হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে আমাদের বিশেষ ধরনের কতকগুলো নির্দিষ্ট গুণ চিহ্নিত করতে হবে যা সকল নেতার মধ্যে পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। গবেষকগণ চেষ্টা করেছেন এমন কতক গুণ চিহ্নিত করতে যার মাধ্যমে তারা একজন কার্যকর নেতাকে অকার্যকর নেতা এবং একজন নেতাকে অনুসারী থেকে আলাদা করতে পারেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

গুণাবলি এ তত্ত্বের একটি সমস্যা হচ্ছে গবেষকগণ এ গুণগুলোকে যথার্থভাবে পরিমাপ করার কোন পদ্ধতি বের করা সম্ভব হয় নি। গিসলি (Edwin Ghiselli) একজন ব্যক্তির গুণাবলি পরিমাপের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনামূলক তালিকা প্রস্তুত করেছেন। একজন সফল ব্যবস্থাপক বা সংগঠন নেতাকে অসফল নেতার সাথে তুলনা করতে গিয়ে গিসলি দেখেছেন যে একজন সফল ব্যবস্থাপকের সবচেয়ে বড়গুণ হচ্ছে তত্ত্বাবধানমূলক যোগ্যতা এবং এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। অন্যান্য গুণের মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমত্তা, আত্মপোলব্ধি, আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়তা। গুণাবলি তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা নিম্নরূপঃ 

(ক) গুণাবলি তত্ত্বের একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যে এ তত্ত্বে অবস্থা বা পরিবেশকে কেন্দ্র করে যে নেতৃত্ব গড়ে উঠে তার কোন উল্লেখ নেই। কতিপয় নির্দিষ্ট গুণাবলি কোন একটি সংগঠনের একজন সফল প্রশাসকের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে কিন্তু অন্য সংগঠনের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। যেমনঃ একজন স্বৈরাচারী প্রশাসক একটি কারাগারের পরিচালক হিসেবে সফল হতে পারেন কিন্তু কল্যাণমূলক সংস্থার ক্ষেত্রে তিনি সফল হবেন না।

(খ) গুণাবলি তত্ত্বে অনুগামী বা অনুসারীদের প্রয়োজন এবং বিভিন্ন গুণের আপেক্ষিক গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি৷

(গ) যে সকল গুণ একজন নেতার মধ্যে থাকা প্রয়োজন বলে স্থির করা হয়েছে তা একত্রে একজন নেতার মধ্যে থাকতে পারে না বা না থাকাটাই স্বাভাবিক।

(ঘ) একজন নেতার ব্যক্তিগত গুণাবলি ছাড়াও আরো অনেক বিষয় যেমন সংগঠনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, অনুসারিগণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং সর্বোপরি সার্বিক পরিস্থিতি সকল নেতৃত্ব বিকাশের সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে অথচ সে সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই এ তত্ত্বে। এ ধরনের সীমাবদ্ধতার জন্যই ১৯৪০ সালের শেষার্ধ থেকে ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি নেতৃত্ব সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার ফলে আচরণবাদ তত্ত্বের জন্ম হয়েছে।

আচরণ তত্ত্ব (Behavioral Theory): তত্ত্বে আচরণ একজন নেতার আচার আচরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এরূপ তত্ত্বের মূলে যা রয়েছে সেটা হচ্ছে, নেতা এক বিশেষ পরিস্থিতি এবং পরিবেশে কাজ করেন এবং পরিবেশের প্রভাব তার কাজ ও আচরণের মধ্যে প্রতিফলিত হয় বা পরিবেশই তার আচরণকে সর্বাপেক্ষা প্রভাবান্বিত করে। আচরণ তত্ত্বের তত্ত্ববিদগণ মনে করেন নানান ধরনের পরিস্থিতি ও পরিবেশের প্রভাবে নেতৃত্বের ধরনও বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ যেতে পারে যে, পরিস্থিতির কারণেই ১৯৩০ সালে জার্মানিতে হিটলার এবং ইতালিতে মুসোলিনীর ন্যায় নেতার আবির্ভাব ঘটে।

নেতা তার অনুসারীদের প্রতি অথবা একজন ব্যবস্থাপক বা প্রশাসক তার অধীনস্থ কর্মচারীদের প্রতি কিরূপ আচরণ করেন তিনি কি গণতান্ত্রিক না কি স্বৈরতান্ত্রিক তা অতি সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, নেতৃত্বের আচরণ তত্ত্ব অনেকটা সুনির্দিষ্ট। তাতে নেতৃত্বের প্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা যায় এবং বিশেষ আচরণকে আমরা যদি নেতৃত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট করি বা নেতৃত্ব নির্ধারক হিসেবে গণ্য করি তাহলে আমরা বলতে পারি যে, লোকদেরকে নেতৃত্ব অর্জনের জন্য শিক্ষাদান করা যেতে পারে। যারা সফল নেতা হতে চান তাদের জন্য আমরা নির্দিষ্ট কর্মসূচি প্রণয়ন করতে পারি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কি ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি আচার-আচরণ দেখানো প্রয়োজন সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রেখে যাওয়া যায়। এগুলো কার্যকর হলে নিঃসন্দেহে অনেক সংখ্যক নেতার জন্ম হবে। ব্যবহারিক দিক থেকে আমরা গুণাবলি তত্ত্বকে সঠিক বলে মেনে নেই তাহলে আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে ‘জন্ম লাভ করে, নেতৃত্ব শেখানো যায় না' বা সৃষ্টিও করা যায় না। নেতাকে অনেক গুণের অধিকারী হতে হবে। আর যদি গুণ না থাকে তাহলে নেতার মধ্যে নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না। অপরপক্ষে, আমরা আলোচনা করেছি যে নেতৃত্বকে নির্দিষ্ট ধরনের আচরণসমূহের প্রেক্ষিতে চিহ্নিত করা হলে এরূপ নেতৃত্বকে গড়ে তোলা যায় বা নেতৃত্ব অর্জন করার প্রয়োজনীয় শিক্ষা দান করা সম্ভব। নেতৃত্বের আচরণ বা প্রকৃতি সম্পর্কে গবেষণা অনেক হয়েছে। এখানে দু'টি অধিক পরিচিত গবেষণা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ 

গবেষণাদ্বয়ের মধ্যে একটি (ক) ওহিও স্টেট গবেষণা (Ohio State Studies) এবং (খ) মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা (University of Michigan Studies)।

(ক) ওহিও স্টেট গবেষণা (Ohio State Studies): ওহিও স্টেট গবেষণায় গবেষকগণ নেতাদের আচরণের উপর গুরুত্বসহকারে ১৫০ টি বিষয় নিয়ে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করেন এবং এ প্রশ্নমালাটি বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ব্যবস্থাপকদের দ্বারা পূরণ করা হচ্ছে। এ গবেষণা অনুসারে নেতার আচরণের দু'টি প্রধান দিক রয়েছে। দিকগুলো হলোঃ 

১। পরিচিতি কাঠামো বা কার্য পরিচিতি; ও 
২। বিবেচনা

১। পরিচিতি কাঠামো বা কার্য পরিচিতি (Initiation of Structure of Task Orientation): পরিচিত কাঠামো বা কার্য পরিচিত বলতে বুঝায় একজন নেতা সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে জন্য তার অধস্তনের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজ বণ্টন করে দেবেন । কাজ করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি বলে দেবেন এবং কাজের সীমারেখা ও কাজের একটি রুটিন তৈরি করে দেবেন। একটি সংগঠনে একজন কর্মচারীর কি প্রত্যাশ্যা থাকতে পারে তাও স্পষ্ট করে নির্ণয় করবেন। এ কাঠামোতে একজন নেতার মূল্যবোধ বেশি বলা যাবে তখনই যখন দেখা যাবে যে, তিনি সংগঠনের কর্মচারীদের মধ্যে কাজ বণ্টন করে দিয়েছেন, কাজ সম্পন্ন করার নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং এটা আশা করা যায় যে কর্মচারীরা তাদের কার্য সম্পাদনে নির্ধারিত মান বজায় (quality) রাখবে।

২। বিবেচনা (Consideration): বিবেচনা বলতে বুঝায়—যে একজন নেতা সংগঠনে একটি সহায়ক এবং অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন কি না তাকে। নেতা তার কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধার দেখভাল করবেন। অধস্তন কর্মচারীদের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ আচরণ, তাদের মতামত এবং অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীল মনোভাব পোথন করবেন। তিনি অধস্তন কর্মচারীদের মধ্যে পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তুলতে সচেষ্ট থাকেবন। অধস্তনদের প্রতি সহযোগিতা ও সমবেদনা প্রকাশ করলে সংগঠনের উদ্দেশ্য সফল হবে না। এ কাঠামোতে সংগঠনে কোন পরিবর্তন প্রবর্তন প্রয়োজন সেটা কর্মচারীদের জানিয়ে দেয়ার পূর্বেই একজন নেতা অধিকতর সফল হবেন যদি তিনি সকল কর্মচারীর ব্যক্তিগত সমস্যার প্রতি খেয়াল রাখেন, সবার সাথে বন্ধুত্বসুলভ এবং সমরূপ আচরণ করেন অর্থাৎ সবাইকে একই দৃষ্টিতে দেখতে পারেন।

পরিসংখ্যানগত দিক থেকে বলা চলে পরিচিতি এবং বিবেচনা এ দু কাঠামো একটি অপরটি থেকে স্বতন্ত্র। একজন নেতা একই সাথে কার্যাভিমুখী এবং বিবেচনার অধিকারী হতে পারেন। গবেষণাটির প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা গেছে যে, কার্য পরিচিতি নেতৃত্ব কাঠামোতে অধিক দৃষ্টি দেয়ার ফলে কর্মসম্পাদন বেড়েছে এবং বিবেচনা কাঠামোতে কর্মচারীর কার্য সম্পাদন কমেছে এবং উপস্থিতির হার বেড়েছে। তবে সব সময়ই একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যাবে তা নয় বরং বিপরীত ফলাফলও পাওয়া গেছে।

(খ) মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা (Study of Michigan University): ওহিও স্টেট গবেষণার পাশাপাশি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব সম্পর্কে গবেষণা করা হয় এবং এখানে নেতৃত্বের দু'টি দিক সম্পর্কে আলোচনা করেন। একটি হলো কর্মচারীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব (Employee oriented) এবং অপরটি উৎপাদনকেন্দ্রিক (Production oriented) নেতৃত্ব। প্রথমটিতে সংগঠনে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্কের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তারা অধস্তনদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন সম্পর্কে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান এবং সংগঠনের সদস্যদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে অবস্থিত পার্থক্যকে স্বীকার করে নেন। অপরপক্ষে, উৎপাদনকেন্দ্রিক নেতৃত্বে কার্য সম্পাদন অথবা কার্য সম্পাদনের কারিগরি দিকের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা হয় এবং এরূপ নেতৃত্বের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সংগঠনের সদস্যগণ নির্ধারিত কাজ বা দায়িত্ব পালন করছেন কি না তা পর্যবেক্ষণ করা। কার্য সম্পাদন তাদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্য সম্পাদনে কর্মচারীদেরকে কেবল একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু কার্যসম্পাদনে কর্মচারীরা কোন অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না তা নিয়ে এরূপ নেতৃত্ব মাথা ঘামায় না।

অবশ্য কর্মচারীকেন্দ্রিক নেতৃত্বকেই মিশিগান গবেষণা গোষ্ঠী সমর্থন করেছেন। কারণ তাতে একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়ে অন্যদিকে অধিক কর্মসন্তুষ্টিও অর্জিত হয়। কিন্তু উৎপাদনকেন্দ্ৰিক নেতৃত্বে উল্টো ফলাফল পাওয়া যায় অর্থাৎ উৎপাদনও বাড়ে না এবং কার্যসন্তুষ্টিও অর্জিত হয় না। আচরণ তত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে যে, নেতৃত্বের আচরণ এবং দলভিত্তিক কার্য সম্পাদনের মধ্যে সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক সবসময় থাকে না। এ তত্ত্বে যে জিনিসটির অভাব লক্ষ্য করা যায় সেটি অবস্থাভিত্তিক নেতৃত্ব। একজন নেতার সাফল্য বা ব্যর্থতা অনেকটা নির্ভর করে বিরাজমান পরিস্থিতির উপর এবং সে পরিস্থিতিকে তিনি কিভাবে ব্যবহার করেছেন তার উপরও বটে। 

অবস্থাভিত্তিক তত্ত্ব (Situational Theory): বারো অবস্থাভিত্তিক তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে যে, বিশেষ পরিস্থিতিতে নেতাকে বিশেষ ধরনের আচরণ দেখাতে হয় এবং সেভাবে কার্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। পরিবেশ ও পরিস্থিতি দ্বারাই একজন নেতা সর্বাধিক প্রভাব প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। তাই তত্ত্ববিদগণ মনে করেন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের মধ্যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। পরিস্থিতিই এক এক সময় এক একজন নেতার আবির্ভাব ঘটিয়েছে। তাদের চিন্তা চেতনায়, কাজে কর্মে বিভিন্ন ধরনের দর্শন এবং আচরণ প্রতিভাত হয়েছে। হিটলার, গান্ধী, শেখ মুজিবর রহমান, শেরে বাংলা, মুসোলিনি প্রমুখ নেতার আবির্ভাব বিশেষ পরিস্থিতির কারণেই হয়েছিল। অবস্থাভিত্তিক প্রধান উপাদানসমূহকে পৃথক করার জন্য বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহৃত হয়েছে এবং এগুলো সফল ও ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। এখানে অবস্থাভিত্তিক মডেল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এ মডেল হলোঃ 

(ক) স্বৈরতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক চলমাত্র তত্ত্ব (Autocratic-Democratic Dynamic Theory)
(খ) ফিডলার তত্ত্ব (Fiedler Theory)
(গ) পন্থা-লক্ষ্য তত্ত্ব (Path Goal Theory) 
(ঘ) ব্রুম ইটন তত্ত্ব (Vroom-Yetton Theory)

(ক) স্বৈরতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক চলমান তত্ত্বঃ স্বৈরতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক আচরণকে দু'টি চূড়ান্ত অবস্থানের প্রেক্ষিতে বিচার করা হলে মডেলকে যথার্থ আচরণ তত্ত্ব বলে গণ্য করা হবে। বস্তুত এরূপ আচরণ হচ্ছে একটি চলমান মডেলের অনেকগুলো অবস্থানের মধ্যে দু'টি অবস্থান মাত্র। এ চলমান মডেলের এক প্রান্তে রয়েছে নেতা সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করেন এবং সে সিদ্ধান্ত তার অধীনস্থদের অবহিত করেন ও তিনি আশা পোষণ করেন যে, তার অধীনস্থরা এ সিদ্ধান্ত মেনে চলবে বা কার্যকর করবে। এ মডেলের অপর প্রান্তে নেতা তার অধীনস্থদের সাথে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করেন এবং প্রতিটি কর্মচারীকে ‘এক ব্যক্তি এক ভোট'-এ নীতি অনুসারে অকপটে সমানভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করেন। এ দুই প্রান্তের মাঝখানে রয়েছে বিভিন্ন নেতৃত্বের ধরন যা নেতা, নেতার অনুসারী দল এবং পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এ দুয়ের মাঝখানের নেতৃত্ব হলো অবস্থাভিত্তিক নেতৃত্ব এটা প্রমাণ করে যে, স্বৈরতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব উভয়ের কোনটাই সব অবস্থায় কার্যকরী হয় না যদিও জনগণ গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব পছন্দ করে। কিন্তু তাই বলে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে উৎপাদন বাড়বেই এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।

(খ) ফিডলার তত্ত্বঃ ফিডলারই প্রতিষ্ঠিত করেন নেতৃত্বের ব্যাপক অবস্থাভিত্তিক মডেল। তার এ তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো যে, সফল নেতৃত্বকে যাচাই করার প্রধান উপাদান হলো সাংগঠনিক পরিবেশ বা অবস্থা। এ মডেল অনুযায়ী একটি দলের সুষ্ঠু কার্য সম্পাদন নির্ভর করে সাংগঠনিক নেতা কিভাবে অধস্তনদের সাথে পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন এবং কিভাবে একজন নেতা পরিস্থিতি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হন। তার উপর একজন কর্মীর কাজের প্রতি অনুরাগ বেশি, না তার সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী কি না তা নির্ধারণ করার জন্য ফিডলার একটি পদ্ধতি বের করেছেন এবং এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে কম পছন্দনীয় কর্মচারী চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করেন । আর তিনি তিনটি অবস্থাভিত্তিক উপাদান আলাদাভাবে চিহ্নিত করেন। যথাঃ

১। নেতা অনুসারী সম্পর্ক– এতে একজন নেতার প্রতি অধস্তন কর্মচারীর কি পরিমাণ আস্থা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে তা বুঝায়।

২। কর্মকাঠামো– কি পরিমাণে একটি নির্ধারিত কাজকে পদ্ধতিগত থেকে নির্দিষ্টকরণ করা হয়েছে।

৩। পদ সংক্রান্ত– কর্মচারীদের নিয়োগ, খাস্ত, পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি এবং কর্ম শৃঙ্খলা বিধানে একজন নেতার কতটুকু প্রভাব রয়েছে।

একজন নেতা যিনি সবচেয়ে কম পছন্দনীয় কর্মীকে সহৃদয় মনোভাব দিয়ে দেখেন তাকে কর্মচারীকেন্দ্রিক এবং বিবেচনামূলক বলে অভিহিত করা যায়। আর যিনি সর্বাপেক্ষা কম পছন্দনীয় কর্মচারীকে সহৃদয়তার সাথে দেখেন না তাকে বলা যায় কর্মকেন্দ্রিক। কারণ একজন নেতা হয়ত অতি বেশি কর্মকেন্দ্রিক অথবা কর্মচারীকেন্দ্রিক। কর্মচারীকেন্দ্রিক হতে পারেন কিন্তু একই সাথে দু'টো হতে পারে না।

তিনি আটটি সম্ভাব্য অবস্থায় কোন ধরনের নেতৃত্ব উপযুক্ত সে সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখান যে পাঁচটি ক্ষেত্রে কর্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব কার্যকর এবং তিনটি ক্ষেত্রে বিবেচনাকেন্দ্রিক নেতৃত্ব কার্যকর। ফিডলারের মতানুসারে চরম পরিস্থিতিতে খুব নিশ্চিত অথবা খুব অনিশ্চিত অবস্থায় কর্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব খুব কার্যকর হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে, যেমনঃ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি পরিস্থিতিতে কর্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব অধিকার সহায়ক হয়। অপেক্ষাকৃত নিশ্চিত পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে বিবেচনামূলক নেতৃত্বই অধিক উপযোগী বলে মনে হয় এবং নেতা ও কর্মচারীর মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে কাজ অসংহত এবং দুর্বল হবে পদ সংক্রান্ত ক্ষমতা। যেহেতু নেতৃত্বের ধরন অনেকাংশে অবস্থার উপর নির্ভর করছে সেহেতু ফিডলারের পদ্ধতিকে নেতৃত্বের অবস্থাভিত্তিক তত্ত্ব বলা হয়।

(গ) হাউসের পন্থা-লক্ষ্য তত্ত্বঃ নেতৃত্বের এ তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত করেন টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট হাউস ।১৮ এ তত্ত্বটি হলো ওহিও স্টেট্ এবং ফিডলার তত্ত্বের সমন্বয়। তিনি এ তত্ত্বে একটি নতুন উপাদান সংযোজন করেন সেটি হলো কিভাবে অধস্তনদের প্রেষণা বাড়ানো যায়। হাউস কর্মচারীদের প্রেষণা পরীক্ষার জন্য প্রত্যাশা তত্ত্ব (Expectancy theory) ব্যবহার করেছেন। তাতে একজন অধস্তন কর্মচারী কাজ করতে প্রেরণা লাভ করেন যদি তিনি দেখেন যে তার প্রচেষ্টার ফলে কার্য সম্পাদনে সফলতা লাভ হয়েছে এবং এর জন্য তিনি পুরস্কৃত হবেন। তিনি মনে করেন নেতৃত্বের ধরন তখনই গুরুত্বপূর্ণ হবে যখন এ নেতৃত্ব অধস্তন কর্মচারীদের কাজ করার স্পৃহাকে প্রভাবান্বিত করতে পারবেন। এমন অনেক পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে নেতৃত্বের ধরন অধস্তনদের মধ্যে প্রেষণা সম্পর্কে কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়। হাউস কর্মকেন্দ্রিক এবং বিবেচনাকেন্দ্রিক এ দুই মডেলকে একত্রে করে কর্মচারীদের মধ্যে কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রেষণা সৃষ্টি করার কথা বলেছেন। এ তত্ত্বকে ‘পথ পরিষ্কার', ‘প্রয়োজন পূরণ' এবং ‘লক্ষ্য অর্জন' বলে বর্ণনা করেছেন। তার মতে কর্মকেন্দ্রিক কাঠামো ‘পথকে পরিষ্কার করবে' এবং 'বিবচেনাকেন্দ্রিক' নেতৃত্ব ভ্রমণের জন্য পথকে সুগম করে তুলবে। হাউস মনে করেন যে, একজন নেতা কর্মকেন্দ্রিক এবং বিবেচনামূলক এ দুইই হতে পারেন তাতে কর্মচারীদের কার্য সম্পাদন এবং তাদের মনোবল দুই-ই বৃদ্ধি পাবে। তাতে গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং তার এ তত্ত্ব ব্যবস্থাপনার তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক উভয় প্রসঙ্গেই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এ মডেলের দু'টি সাধারণ প্রস্তাবনা রয়েছেঃ 

১। একজন নেতার আচরণ গ্রহণযোগ্য হয় তখন যখন দেখা যায় অধস্তন কর্মচারীগণ তার আচরণে তাৎক্ষণিকভাবে সন্তুষ্টি অথবা ভবিষ্যৎ সন্তুষ্টি অর্জনের পক্ষে সহায়ক কারণ হয়।

২। নেতার আচরণ সে পরিমাণে উদ্দীপক হবে যদি তা (ক) অধস্তনদের প্রয়োজন পূরণে সন্তুষ্টি বিধান ও সুষ্ঠু কার্য সম্পাদনের উপর নির্ভরশীল করে তোলে এবং (খ) প্রশিক্ষণ, উপদেশ, সমর্থন ও সুষ্ঠু কার্য সম্পাদনের জন্য পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে অধস্তনদের মধ্যে এক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে তোলে। 

নিচে হাউস-তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উল্লেখ করা হলোঃ 

১। নেতৃত্বের ধরনকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা যায় না যদি অধস্তন কর্মচারীদের প্রেষণাকে বিবেচনা করা না হয়।

২। নির্দিষ্ট নেতৃত্বের কার্যকারিতা দুটি অবস্থার প্রভাবের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যথাঃ চাকরির অস্পষ্টতা এবং চাকরির সন্তুষ্টি।

৩। নেতা অনেক ক্ষেত্রে কর্মচারীদের কার্য সম্পাদন অথবা গোষ্ঠী মনোবলের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেন না।

৪। একজন নেতা একই সাথে নৈতিক মনোবল ও কার্য সম্পাদনে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেন যদি তিনি একই সাথে কর্মচারী এবং বিবেচনাকেন্দ্রিক হতে পারেন।

অংশগ্রহণ মডেল (Participant Model): অতি সাম্প্রতিক অবস্থাভিত্তিক তত্ত্বের সাথে নেতৃত্ব অংশগ্রহণ মডেল সংযোজিত হয়েছে। এ মডেলের প্রস্তাবক হলেন ভিকটর ক্রম এবং ফিলিপ ইটন। এ তত্ত্বে নেতার আচরণ এবং অংশগ্রহণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারা মনে করেন যে নেতাদেরকে তাদের আচরণের মধ্যে কর্মকেন্দ্রিক কাঠামো প্রতিফলিত করতে হবে। এ মডেলটি ঐতিহ্যবোধক। তাদের মধ্যে বিভিন্ন অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণের ধরন ও তীব্রতা নির্ধারণ করার জন্য পর্যায়ক্রমিক নিয়মাবলি রয়েছে। এ মডেলকে ‘সিদ্ধান্ত বৃক্ষ' বলা হয় এবং এতে আটটি অবস্থা এবং পাঁচটি বিকল্প-নেতৃত্বের ধরন বর্ণিত হয়েছে রয়েছে।

মডেলটি খুব উৎসাহব্যঞ্জক। এখানে ফিডলারের সাথে এ মডেলের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ফিডলার নেতার সহজাত বৈশিষ্ট্যের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য পরিবেশ পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তার মতে নেতৃত্বের ধরন মূলত অনমনীয়। ব্রুম এবং ইটন এ ধারণার সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তারা মনে করেন নেতৃবর্গ অনমনীয় নন এবং তারা পরিবেশ বা পরিস্থিতির সাথে তাদেরকে খাপ খাওয়াতে পারেন।

উপসংহারঃ যোগ্য নেতৃত্ব যেমন কোনো সংগঠন, সমাজ বা জাতিকে সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, আবার বিপরীত দিকে অযোগ্য নেতৃত্ব ঠিক একটি সংগঠন, সমাজ বা জাতিকে ধ্বংসের অতল তলে নিমজ্জিত করতে পারে। মাঝি ছাড়া যেমন নৌকা চলে না তেমনি নেতৃত্ব ছাড়া দেশ, জাতি ও সমাজ চলতে পারে না। নেতা যদি যোগ্য হন তাহলে তিনি তার জনগোষ্ঠীকে সফলতার সাথে লক্ষ্যপানে নিয়ে যেতে পারেন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক