তুলনামূলক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর


প্রশ্ন: তুলনামূলক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

ভূমিকা: পৃথিবীর সকল বিষয়ই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাই তুলনামূলক রাজনীতিরও কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, যেগুলো গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে এর পার্থক্য নির্দেশ করে। পাশাপাশি এই বৈশিষ্ট্যগুলো তুলনামূলক রাজনীতির প্রকৃতিকেই প্রতিফলিত করে।

তুলনামূলক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য: নিম্নে তুলনামূলক রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. বিষয়বস্তুর তুলনামূলক অধ্যয়ন: তুলনামূলক অধ্যয়ন পদ্ধতি তুলনামূলক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কারণ তুলনামূলক বিশ্লেষণ ছাড়া রাজনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা বা সফলতা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। যেমন- কোন দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সফল, আবার কোন দেশে ব্যর্থ হচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধান ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের একমাত্র উপায় হলো বিভিন্ন সমাজব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা।

২. ব্যাপকতা: তুলনামূলক রাজনীতি সীমিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না। বরং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, প্রক্রিয়া ও ক্ষমতা প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে আলোচনার ক্ষেত্র ব্যাপক হয়।

৩. বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত অধ্যয়ন: তুলনামূলক রাজনীতির অধ্যয়ন নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সারা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। একজন বিশ্লেষককে উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।

৪. রাজনৈতিক কাঠামোর বিশ্লেষণ: তুলনামূলক রাজনীতি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আইনসভা, বিচারবিভাগ, আমলাতন্ত্র, ভোটদান ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় বিশ্লেষণ করে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক কাঠামোর প্রকৃতি বোঝা যায় এবং উন্নয়নের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা যায়।

৫. অনানুষ্ঠানিক কাঠামোর বিশ্লেষণ: এটি কেবল সরকারের আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সরকারের অনানুষ্ঠানিক কাঠামো যেমন রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ইত্যাদিকেও অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে রাজনৈতিক ব্যবস্থার গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৬. বিভিন্ন উপাদানের উপর গুরুত্ব: তুলনামূলক রাজনীতি রাজনৈতিক ব্যবস্থার একক বিষয় নিয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে সকল উপাদানকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন, উন্নয়নশীল দেশের সমাজব্যবস্থায় আর্থ-সামাজিক অবস্থা বোঝার জন্য এলিট শ্রেণীর অবস্থান, ভূমিকা ও সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কিত সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

৭. রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে অন্যান্য শাখার সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ: তুলনামূলক রাজনীতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংযুক্ত করে। যেমন- আইন শাস্ত্র থেকে অধিকার ও দায়িত্ব, দর্শন থেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, সমাজবিজ্ঞান থেকে সামাজিক শ্রেণী ও কাঠামো, অর্থনীতি থেকে ইনপুট-আউটপুট, নৃবিজ্ঞান থেকে জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি।

৮. নীতি-নৈতিকতা বিচ্ছিন্ন: তুলনামূলক রাজনীতি আচরণবাদের মত রাজনীতির নীতি-নৈতিকতাকে বিচ্ছিন্ন করে। এটি নির্ধারণ করে না যে রাজনীতি কেমন হওয়া উচিত, বরং বাস্তবিক অবস্থা কি তা বিশ্লেষণ করে।

৯. মূল্যবোধ নিরপেক্ষ: তুলনামূলক রাজনীতি নিরপেক্ষ মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে। তাই এর সিদ্ধান্ত ও বিশ্লেষণ গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর হয়।

১০. পরিবর্তনশীলতা: সমাজ স্থির নয়, পরিবর্তনশীল। তুলনামূলক রাজনীতি এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র, উপাদান সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায় যে তুলনামূলক রাজনীতি তুলনামূলক সরকারেরই একটি পরিবর্তিত রূপ। যদিও পূর্বে রাজনীতিতে তুলনামূলক পদ্ধতির ব্যবহার ছিল, বর্তমানে এর পরিধি অনেক বিস্তৃত এবং বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তুলনামূলক রাজনীতি রাজনৈতিক বিশ্লেষণে কার্যকর এবং বাস্তবভিত্তিক সফলতা অর্জন করেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

টপিক