প্রশ্ন: রাজনীতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে আচরণবাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
ভূমিকা: আচরণবাদ কয়েকটি মৌলিক ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এসব ধারণার সমন্বয়ে আচরণবাদের ভিত্তি গড়ে উঠেছে। রাজনীতি বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে আচরণবাদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন আচরণবাদী দার্শনিকগণ নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আচরণবাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। এদের মধ্যে ই. এম. কার্কপ্যাট্রিক, হেনজ ইউলা ও ডেভিড ইস্টন প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আচরণবাদের বৈশিষ্ট্য:
১. মূল্যবোধ: মূল্যবোধ নিরপেক্ষতা বৈজ্ঞানিক আলোচনার অন্যতম শর্ত। ডেভিড ইস্টন বলেন,
"Ethical evaluation and empirical explanation should be kept separate."
তিনি আরও মত প্রকাশ করেন যে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তির আচরণ বিশ্লেষণের জন্য অবশ্যই মূল্যবোধ অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে গবেষকদের নিজেদের মূল্যবোধ সতর্কতার সঙ্গে সরিয়ে রাখতে হবে।
২. নিয়মানুবর্তিতা: পরিবেশ ও পরিস্থিতির ভিন্নতার কারণে মানুষের আচরণ ও কার্যকলাপে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ইস্টনের মতে, আচরণগত পার্থক্য থাকলেও মানুষের সার্বিক কার্যকলাপে নিয়মানুবর্তিতা বিদ্যমান। এ নিয়মানুবর্তিতার ভিত্তিতে সাধারণ অনুমান বা তত্ত্ব গড়ে তোলা সম্ভব, যা রাজনৈতিক কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহার করা যায়।
৩. সংহতি সাধন: আচরণবাদীরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ‘Multidisciplinary’ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। কারণ তারা মনে করেন, সকল কাজের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় ও সংহতি ব্যতীত সঠিক ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, তারা মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে সংহতি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী।
৪. প্রণালীবদ্ধকরণ: গবেষণা যদি তত্ত্বভিত্তিক ও অর্থপূর্ণ না হয়, তবে তা অসম্পূর্ণ ও অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই গবেষণাকে অবশ্যই প্রণালীবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতির ক্ষেত্রে যাবতীয় তত্ত্ব প্রণালীবদ্ধ হওয়া উচিত।
৫. কৌশল: তথ্যনির্ভর পদ্ধতি হওয়ায় আচরণবাদ ব্যাখ্যা করতে গবেষকরা বিভিন্ন পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করেন। এ ক্ষেত্রে তারা পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করে, বিশ্লেষণ করে এবং নানা কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনীতি বিশ্লেষণ করে।
৬. যাচাইকরণ: রাজনীতি বিশ্লেষণে আচরণবাদীরা শুধুমাত্র যাচাইযোগ্য বিষয়কেই আলোচনার মূলবিন্দু মনে করেন। যেসব বিষয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করে না, সেগুলো আলোচনা হতে পারে না। এ কারণে বিমূর্ত বিষয়বস্তু যাচাইযোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়।
৭. সংখ্যায়ন: আচরণবাদীরা রাজনীতি ব্যাখ্যা করতে পরিসংখ্যান ও পরিমাপ ব্যবহার করেন। ইস্টন মনে করেন, সংখ্যাগত পরিমাপ বর্ণনামূলক ব্যাখ্যার তুলনায় রাজনৈতিক বিষয়কে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ করে তোলে।
৮. খাঁটি বিজ্ঞান: তত্ত্ব ও এর প্রয়োগ উভয়ই গবেষণার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ তত্ত্বগত ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষণের সঙ্গে বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানেও প্রযোজ্য। তাই আচরণবাদীরা রাজনীতি বিশ্লেষণে খাঁটি বিজ্ঞানের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

0 মন্তব্যসমূহ